শুক্রবার
১৭ই মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
দুপুর ১:৫৯

পরাশক্তি চীন সম্পর্কে অজানা কিছু তথ্য জেনে নিন

alorontv.com

বেশকিছু দিন ধরে চীন-তাইওয়ান উত্তেজনার কারণে বর্তমান বিশ্বের সবচেয়ে আলোচিত রাষ্ট্রটি হচ্ছে চীন। সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের হাউজ অফ রিপ্রেজেন্টেটিভ ন্যান্সি পেলোসির তাইওয়ান সফরকে ঘিরে এই উত্তেজনার মাত্রা আরো তীব্রতর হয়েছে। চীন এরই মধ্যে তাইওয়ানের আশেপাশে ব্যাপক সামরিক মহড়া শুরু করে দিয়েছে। এছাড়াও তাইওয়ানের উপর বিভিন্ন নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে চীন।

তাইওয়ান নিজেদেরকে একটি স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে বিবেচনা করে। একই সাথে চীনকে নিজ দেশের অংশ হিসেবেও মনে করেন তাইওয়ানরা। অপরদিকে চীন সর্বদা বলে আসছে তাইওয়ান তাদের একটি স্বায়ত্তশাসিত অঙ্গরাজ্য। এ কারণে তাইওয়ানকে বিশ্ব থেকে সবসময় আলাদা করে রাখতে চায় চীন।

রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে সারাবিশ্বকে এর মূল্য দিতে হচ্ছে। ইউরোপসহ অনেক দেশেই দেখা দিয়েছে মূল্যস্ফীতি। জ্বালানি ও ভোজ্যতেলের বাজার অস্থির। খাদ্য সংকটে পড়েছে বিশ্বের অসংখ্য দেশ। এক কথায় বলতে গেলে, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের ফলে অনেক সমস্যা পোহাতে হচ্ছে সারাবিশ্বের মানুষকে।

এরকম একটি পরিস্থিতিতে যদি চীন-তাইওয়ান যুদ্ধ বেঁধে যায়। তাহলে এর জন্য চরম মূল্য দিতে হবে বিশ্বকে। বিশেষ করে উন্নয়নশীল দেশগুলোর অবস্থা নাজেহাল হয়ে পড়বে।এর প্রভাব পড়তে শুরু করেছে বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা, ভিয়েতনামসহ আরও অনেক রাষ্ট্রে।

চীন: এশিয়া মহাদেশের সবচেয়ে বড় রাষ্ট্র চীন। এর আয়তন ৯৫ লক্ষ ৯৬ হাজার ৯৬১ বর্গকিলোমিটার। আয়তনের দিক দিয়ে চীন পৃথিবীর চতুর্থ বৃহত্তম দেশ। বেইজিং হচ্ছে চীনের রাজধানী। জনসংখ্যার দিক দিয়ে চীন বিশ্বে প্রথম। এর জনসংখ্যা প্রায় ১৪৪ কোটি। বর্তমান বিশ্বের সবচেয়ে বড় অর্থনীতির দেশ হচ্ছে চীন। যদিও এখনো চীন দ্বিতীয় নম্বরে অবস্থান করছে। আশা করা যাচ্ছে খুব শ্রীঘ্রই চীন আমেরিকাকে পিছনে ফেলে এক নম্বর অর্থনীতির দেশ হতে যাচ্ছে।

রাজনীতি: রাজনৈতিক ক্ষেত্রেও চীন বিশ্বে আধিপত্য বিস্তার করেছে। চীনের বর্তমান রাষ্ট্রপতি শি জিনপিং ২০১২ সালে দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকে প্রতিবেশী দেশগুলোর সাথে সুসম্পর্ক বজায় রাখার চেষ্টা করছে। ভারত, জাপান আর দক্ষিণ কোরিয়ার সাথে ভালো সম্পর্ক না থাকলেও বাণিজ্যিক সুসম্পর্ক রয়েছে।

চীন জাতিসংঘের একটি স্থায়ী সদস্য রাষ্ট্র। চীন ১৯৪৫ সালে জাতিসংঘের সদস্যপদ লাভ করে। ১৯৭১ সালে চীন প্রজাতন্ত্রকে প্রতস্থাপিত করে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের স্থায়ী সদস্য হয়।

alorontv.com

সামরিক শক্তি: সামরিক শক্তির দিক দিয়ে চীন বিশ্বে প্রথম। চীনের বর্তমান সৈন্যসংখ্যা ২১ লক্ষ ১০ হাজার। এর মধ্যে ১৬ লক্ষ সক্রিয় সদস্য এবং ৫ লক্ষ ১০ হাজার সৈন্য সংরক্ষিত। চীনের কাছে ১ হাজার ২৪০টি যুদ্ধবিমান রয়েছে। এগুলোর মধ্যে মিগ-সেভেনটিন, মিগ-নাইনটিন, মিগ-টোয়েন্টিওয়ান, জে-ফাইভ, জে-সিক্স, জে-সেভেন, চতুর্থ প্রজন্মের এসইউ উল্লেখযোগ্য। এছাড়া এয়ারক্রাফট ৩ হাজার ২৩০টি এবং ৯২০টি হেলিকপ্টার রয়েছে। চীনের বিমানবন্দরের সংখ্যা ৫০৭টি। চীনের কাছে উন্নত প্রযুক্তির ৭৮০টি যুদ্ধজাহাজ রয়েছে। এর মধ্যে বিমানবাহী জাহাজ ২টি। চীনের রণতরি মোট ৫২টি। চীনের নৌবন্দর ও টার্মিনাল রয়েছে মোট ২২টি। চীনের কাছে মোট ৩ হাজার ৫১০টি ট্যাংক রয়েছে। আর সাঁজোয়া যানবাহনের সংখ্যা প্রায় ৩৪ হাজার। স্বয়ংক্রিয় আর্টলারির সংখ্যা ৩ হাজার ৮০০টি, ফিল্ড আর্টিলারি রয়েছে ৩ হাজার ৮০০টি। এছাড়াও চীনের কাছে ২ হাজার ৬৫০টি রকেট প্রজেক্টর রয়েছে। চীনের সাবমেরিন সংখ্যা ৭৫টি। এছাড়াও ৩৬টি ডেস্ট্রয়ার এবং ৫২টি ফ্রিগেট রয়েছে।

চীনের অর্থনীতি: অর্থনীতির দিক দিয়ে চীন অত্যন্ত শক্তিশালী অবস্থানে রয়েছে। বর্তমান বিশ্বের দ্বিতীয় অর্থনীতির দেশ হিসেবে চীনকে বিবেচনা করা হয়। প্রতিনিয়ত চীনের অর্থনীতি সমৃদ্ধশালী হচ্ছে। বিশেষ করে করোনাকালীন সময়ে পুরো বিশ্বের অর্থনীতি যখন নাজেহাল হয়ে পড়ছিল। বিশ্বের অনেক নামিদামি জায়েন্ট কোম্পানি গুলোর শেয়ার মার্কেট যখন মুখ থুবড়ে পড়ছিল, তখন চীনা অনেক কোম্পানি তাদের শেয়ার গুলো কিনে রাতারাতি বিলিয়ন বিলিয়ন ডলারের মালিক হয়ে যায়।

জিডিপি এবং ক্রয়ক্ষমতার দিক দিয়ে চীন বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনীতির দেশ। রপ্তানির দিক দিয়ে চীন বিশ্বে প্রথম এবং আমদানির দিক দিয়ে দ্বিতীয়। বিগত ৩০ বছর ধরে চীন প্রায় ১০ শতাংশ প্রবৃদ্ধি ধরে রেখেছে। জিডিপির দিক দিয়ে আমেরিকাকে পিছনে ফেলেছে চীন। ২০২০ সালে চীনের জিডিপি ছিল ২৯.৪৭ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলার। আর আমেরিকার ছিল ২২.৩২ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলার। পরবর্তীতে চীনের জিডিপি আরও বাড়তে থাকে। ২০২১ সালে এসে চীনের জিডিপির আকার দাঁড়িয়েছে ৩১.৮৫ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলারে। চীনের অর্থনীতির প্রধান খাতসমূহ হচ্ছে কৃষি, খনিজ, শিল্প, অবকাঠামো ও সেবাখাত। বিগত ২৫ বছরে চীনের শিল্প, অবকাঠামো ও সেবাখাতের অকল্পনীয় উন্নতি সাধিত হয়েছে। বিশ্বের উন্নয়নশীল দেশগুলোতে চীনের সহযোগিতা লক্ষণীয়। অবকাঠামোগত উন্নয়নে বিশ্বের অনেক দেশেই চীনা ইঞ্জিনিয়ার কাজ করেছে। বাংলাদেশের পদ্মা সেতুর কাজও কিন্তু চীনা কোম্পানি করেছে। আর সেবাখাতে বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী অবস্থানেও রয়েছে চীন। বিগত বছরগুলোতে মোবাইল ও কম্পিউটার তৈরিতে, নেটওয়ার্কিং ক্ষেত্রে চীনের অবদান অসীম।

পোস্টটি শেয়ার করুন...

Share on facebook
Share on twitter
Share on linkedin
Share on pinterest
Share on tumblr
Share on whatsapp

রিলেটেড পোস্ট

ফেসবুক পেজে লাইক দিন

অন্যান্য পোস্ট