আজ বৃহস্পতিবার বিকেলে মহান জাতীয় সংসদে ২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেট পেশ করা হয়। অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেছেন, করোনা মোকাবিলা ও অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারে নেওয়া উদ্যোগগুলো আমরা আগামী অর্থবছরেও অব্যাহত রাখবো। তবে সংকটের প্রেক্ষাপট পরিবর্তন হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আমাদের অগ্রাধিকারও কিছুটা পরিবর্তন হবে।
বাজেট নিয়ে প্রতিক্রিয়া জানতে চাওয়া হলে, বিএনপির সংসদ সদস্য হারুনুর রশিদ বলেন, এই প্রথম সম্পূর্ণ বাজেট ডিজিটাল ভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে। সাধারণত দেখা যায়, অর্থমন্ত্রী বাজেটের কিছু অংশ পাঠ করেন। কিন্তু এবার সম্পূর্ণ বাজেটটি ডিজিটাল উপস্থাপন, যেটা একটি নতুন প্রক্রিয়া। এই বাজেটটি আওয়ামী লীগ সরকারের মেয়াদের শেষ পূর্ণাঙ্গ বাজেট। বাজেটের মধ্যে এই মুহূর্তে পূর্ণাঙ্গ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করা সম্ভব নয়। এটি সরাসরি একটি লুটপাটের বাজেট। এই বাজেটের পৌনে সাত লক্ষ কোটি টাকার ৩৫ থেকে ৪০ শতাংশ আভ্যন্তরীণ ও বৈদেশিক ঋণ নির্ভর। বিদ্যুৎ খাতে ৮২ হাজার কোটি টাকা ভর্তুকি দেখানো হয়েছে যা সম্পূর্ণ লুটপাট। কুইক রেন্টাল বিদ্যুৎ বন্ধ করে দেয়ার কথা বলছি। তেল, গ্যাস, বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধি করে জনগণের উপর বোঝা চাপানো হচ্ছে। দ্রব্যমূল্য ও মূল্যস্ফীতি বৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণে কোনো কার্যকরী পদক্ষেপ এই বাজেটে নেই।
জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জি এম কাদের বাজেটের প্রতিক্রিয়ায় বলেন, এই বাজেটটি একটি উচ্চ বিলাসী বাজেট। কোভিড পরিস্থিতি ও রাশিয়া – ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে বিভিন্ন জিনিসপত্রের দাম বৃদ্ধির ফলে বাজেটটি উচ্চ বিলাসী মনে হয়েছে। এই বাজেটে ঘাটতি অনেক বেশি। প্রায় আড়াই লক্ষ কোটি টাকা ঘাটতি যা মোট জিডিপির ৫.৫ ভাগ। মোট বাজেটের প্রায় ৩৬ শতাংশ ঋণ নির্ভর। এর মধ্যে আভ্যন্তরীণ ঋণ প্রায় ১ লক্ষ ৪৬ হাজার কোটি টাকার উপরে। এতে করে দেশের অভ্যন্তরে বিনিয়োগে সমস্যা তৈরি এবং এর কারণে কর্মসংস্থান সৃষ্টি বাধাগ্রস্ত হবে। এর মধ্যে ১ লক্ষ ১২ হাজার কোটি টাকার উপরে বৈদেশিক ঋণ যা ভবিষ্যতের জন্য বিপদজনক। এটি আমরা শ্রীলংকা থেকে দেখেছি। মূল্যস্ফীতি বৃদ্ধির কারণে দেশের অর্থনীতি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এর ফলে দেশের মধ্যবিত্ত, নিম্নবিত্ত, নিম্নমধ্যবিত্ত আয়ের মানুষের অনেক অসুবিধা হবে। কিন্তু বাজেটে এই বিষয়ে কোনো সুস্পষ্ট পদক্ষেপ নেয়া হয়নি। গতবছরের চেয়ে এই বাজেটে ৪২ হাজার কোটি টাকা বেশি কর আদায়ের লক্ষ্য নির্ধারণ করে দেয়া হয়েছে। যার ফলে প্রতিটি জিনিসের মূল্য বৃদ্ধি পাবে। সার্বিকভাবে এই কারণে জনগণের কষ্ট বাড়বে।
বিএনপির সংরক্ষিত মহিলা আসনের সংসদ সদস্য রুমিন ফারহানা বলেন, ইউক্রেন – রাশিয়া যুদ্ধের কারণে পুরো বিশ্বের অর্থনীতি বিপর্যস্ত। আমরা আশা করছিলাম, এই বাজেটটি গতানুগতিক বাজেট থেকে ভিন্ন হবে। যে বাজেট সাধারণ মানুষের সমস্যা নিরসনে কাজ করবে। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত এই রকম বাজেট দেখতে পায়নি। আমদানি ব্যয় অনেক বেড়ে গেছে সেই তুলনায় রপ্তানি আয় অনেক কম। মূল্যস্ফীতি আকাশচুম্বী। ডলারের দাম টাকার তুলনায় অনেক বেড়ে গেছে। নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি হচ্ছে না, বেকারত্ব বৃদ্ধি পেয়েছে এমন পরিস্থিতিতে বাজেটটি দেয়া হয়েছে। এই বাজেটে ২ লক্ষ ৪৫ হাজার কোটি টাকা ঘাটতি থাকবে। এই ঘাটতি কিভাবে পূরণ করবে। এর জন্য কর বাড়ানো হবে কিন্তু করের ক্ষেত্র বাড়ছে না। এমন পরিস্থিতিতে এই বাজেট লক্ষ্য পূরণ করবে বলে মনে হচ্ছে না। এই বাজেট বড়লোকদের আরো বড়লোক করবে আর গরিবরা আরো গরিব হবে।